প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ

 প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ 

২০০৯ সাল থেকে গত নয় বছরে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত গড়ে ৫৭.২১ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে রফতানি আয় বাবদ ০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। ফলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। [১০] তথ্যপ্রযুক্তি খাত এ পর্যন্ত প্রায় তিন লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে

 

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি আর্মেনিয়ার বিসিজি সিনিয়র পার্টনার ও গ্লোবাল লিডার ফর ডিজিটাল গভর্নমেন্ট মিগুয়েল কারারসকো বলেন, প্রযুক্তি কর্মসংস্থান তৈরি করে। আগামী দিনে যে রকম কাজ হবে, এর ১০ শতাংশ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ২০ শতাংশ করবে প্রযুক্তি। বাকি ৭০ শতাংশের জন্য মানুষকেই লাগবে। অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম কোরসেরার বৈশ্বিক দক্ষতা সূচক বা ‘গ্লোবাল স্কিলস ইনডেক্স ২০১৯’ (জিএসআই) অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত দক্ষতার দিক থেকে অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ। ওই তালিকায় বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পারফরম্যান্স তুলে ধরা হয়েছে। ওই সূচকে দেখানো হয়েছে, ৯০ শতাংশ উন্নয়নশীল অর্থনীতি এখন ক্রিটিক্যাল স্কিল বা জটিল দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে যাচ্ছে বা ঝুঁকিতে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ।চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মোকাবিলায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্ল্যান রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ডিজিটাল সেবার বিস্তৃতি ও উন্নতি ঘটিয়ে বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরে জাতিসংঘের ই-গভর্ন্যান্স উন্নয়ন সূচকে সেরা ৫০টি দেশের তালিকায় থাকবে। ই-গভর্ন্যান্সের জাতীয় ইনডেক্সে আমরা এখন ১১৫ নম্বরে আছি। আগামী পাঁচ বছরে আমরা আরও ৫০ ধাপ উন্নতি করে দুই অঙ্কের সংখ্যায় আসব, এমন লক্ষ্যমাত্রা আমাদের। ১০ বছর আগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন অনেকেই বুঝতে পারেনি যে ডিজিটাল বাংলাদেশ কী? তবে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তাদের ভুল প্রমাণ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আজ যা দেখছেন, তা ডিজিটাল বাংলাদেশের সামান্য কিছু। আরও অনেক কিছু আমরা করেছি এবং সামনে করব।’

এগিয়ে চলার হার স্পষ্ট
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। ২০১৪ সালে বিশ্বখ্যাত প্রথম সারির ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম এ টি কারনির গ্লোবাল সার্ভিস লোকেশন ইনডেক্স বা জিএসএলআইয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছিল। এ টি কারনির তালিকায় ৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩২। 

সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগের ফলে কয়েক বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, গার্টনার এবং এ টি কারনিসহ বেশ কিছু সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্টে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। এ কারণে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পকে সঙ্গে নিয়ে ই-গভর্ন্যান্সসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশি কোম্পানির জন্য স্থানীয় বাজার প্রসারিত হবে।


অগ্রগতির চিত্র
দেশে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা এক দশক থেকেই দৃশ্যমান। ইতিমধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অন্য রকম উচ্চতায়। বাংলাদেশ প্রযুক্তি বিশ্বে অর্জন করে নিয়েছে নিজেদের একটি সম্মানজনক স্থান। সবচেয়ে বড় বিস্ময়ের নাম হচ্ছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে অগ্রযাত্রা শুরু। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কয়েকটি অনুষঙ্গের ওপর গুরুত্বারোপ করে কাজ করে চলেছে। সে অনুষঙ্গগুলো হলো: (ক) কানেকটিভিটি ও আইসিটি অবকাঠামো (খ) মানবসম্পদ উন্নয়ন (গ) আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন (ঘ) ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং অন্যান্য। বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এই উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ যেসব কাজ করছে: ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি পেশাজীবীর সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা, আইসিটি খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় এবং জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা।


নিজস্ব ডেটাসেন্টার
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিদ্যমান জাতীয় ডেটাসেন্টারটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সেন্টারটির ওয়েবহোস্টিং ক্ষমতা ৭৫০ টেরাবাইটে উন্নীত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বিসিসির এলআইসিটি প্রকল্পের আওতায় একটি বিশেষায়িত ল্যাব এবং একটি স্পেশাল সাউন্ড ইফেক্ট ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষায়িত ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে।


মানবসম্পদ উন্নয়ন
মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল ভিত্তি এবং এই উন্নয়নে লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এলআইসিটি) প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৪ হাজার এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার মানুষকে যথাক্রমে বেসিক আইসিটি, টপ-আপ, ফিউচার লিডার এবং ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিকেআইসিটি থেকে ৩ হাজার ২৭৬, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীন সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় দেশে-বিদেশে ৪ হাজার ৯৮১ এবং ‘বাড়ি বসে বড় লোক’ কর্মসূচির অধীনে ১৪ হাজার ৭৫০ জনকে বেসিক আইসিটি, স্কিল এনহ্যান্সমেন্ট ও ফ্রিল্যান্সিংসহ নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।


স্টার্টআপ কালচার
দেশে ইতিমধ্যে পাঠাওয়ের মতো স্টার্টআপ চালু হয়েছে। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড নামে সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি সরকারি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর স্টার্টআপ মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সিড স্টেজে সর্বোচ্চ এক কোটি এবং গ্রোথ গাইডেড স্টার্টআপ রাউন্ডে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা যাবে।
বাংলাদেশে একটি টেকসই স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরিতে সরকারি মালিকানায় প্রথম ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি হিসেবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড মুখ্য ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের কাজকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন আইডিয়া প্রকল্প বাংলাদেশে স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নির্দেশনায় ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছে। ইতিমধ্যে শতাধিক স্টার্টআপ কোম্পানিকে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিং

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে বাংলাদেশের তরুণদের এগিয়ে থাকতে এআই, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটার মতো আধুনিক বিষয়গুলো শেখার দিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশের সম্পদ তরুণ জনশক্তি। তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এ খাতে দেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও এখন রয়েছে। ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘদিনের দাবি বিদেশ থেকে অর্থ আনার ক্ষেত্রে পেপ্যাল চালু করা করা। এ খাতে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। এর বাইরে কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাওয়ার দাবিও রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে তার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

Tag : #alltechnewsbd , # ALL TECH NEWS , #bangladesh news , #alltechnewsbd.com  


 

 

Next Post Previous Post