কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না ! আর ডায়াবেটিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?

কি খেলে ডায়াবেটিস হবে না !

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে কিছু খাবার এবং অভ্যাস অনুসরণ করা যেতে পারে। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. **স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন করুন**: সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল (যেমন আপেল, বেরি, পেঁপে), বাদাম, এবং সামুদ্রিক মাছ খাদ্যতালিকায় রাখুন।

২. **ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান**: স্যালাড, শিম, এবং পূর্ণ শস্য (যেমন ওটমিল, ব্রাউন রাইস) আপনার রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।

৩. **মিষ্টি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন**: ক্যান্ডি, কেক, কোমল পানীয় এবং অন্যান্য উচ্চ চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া সীমিত করুন।

৪. **মোটা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান**: ফাস্টফুড, উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৫. **স্বাস্থ্যকর প্রোটিন উৎস বেছে নিন**: চিকেন, টার্কি, ডাল, এবং সয়া প্রোটিন ব্যবহার করতে পারেন।

৬. **পরিমাণে খাবার খান**: অতিরিক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৭. **নিয়মিত ব্যায়াম করুন**: হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম করা আপনার শরীরের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।

৮. **পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খান**: ডিহাইড্রেশন রক্তের চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই পর্যাপ্ত পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, আপনার ডায়েটের পরিকল্পনা করার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।

ডায়াবেটিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?

ডায়াবেটিস থাকলে কিছু খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ যাতে রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এখানে কিছু খাবার এবং পানীয় উল্লেখ করা হলো যেগুলি ডায়াবেটিস থাকলে কম খাওয়া উচিত:

১. চিনি ও মিষ্টান্ন: ক্যান্ডি, কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, আইসক্রিম, এবং অন্যান্য মিষ্টি খাবারগুলি দ্রুত রক্তের চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে।

২. প্রক্রিয়াজাত খাবার: সসেজ, হটডগ, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত মাংসের আইটেমগুলি প্রায়ই উচ্চ লবণ এবং অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত থাকে।

৩. সাদা চিনি ও সাদা ময়দার তৈরি খাবার: সাদা ব্রেড, সাদা রাইস, এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত শস্য রক্তে চিনির স্তর দ্রুত বাড়াতে পারে।

৪. চর্বিযুক্ত খাবার: ফ্রাইড খাবার, বেকন, গ্রীস এবং অন্যান্য উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবারগুলি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৫. ফাস্টফুড: ফাস্টফুডে সাধারণত উচ্চ পরিমাণে চর্বি, লবণ এবং চিনির মিশ্রণ থাকে, যা স্বাস্থ্যকর নয়।

৬. বিশেষ ধরনের ফল: কিছু ফল যেমন আনারস, পেঁপে, এবং ভিনেগারযুক্ত ফলের পরিমাণ কমানো যেতে পারে, কারণ এদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স উচ্চ হতে পারে।

৭. চা ও কফির সুগারযুক্ত পণ্য: কোমল পানীয়, সুগারযুক্ত চা ও কফি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

৮. অ্যালকোহল: অ্যালকোহল অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং শর্করা সরবরাহ করতে পারে এবং রক্তের চিনির মাত্রা অস্থিতিশীল করতে পারে।

এছাড়া, প্রতিটি ব্যক্তির ডায়াবেটিসের পরিমাণ এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী খাদ্য পরিকল্পনা ভিন্ন হতে পারে। তাই, আপনার ব্যক্তিগত খাদ্য পরিকল্পনা নিয়ে আপনার চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সাথে আলোচনা করা উচিত।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কোন তেল ভালো? 

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য কিছু তেল অন্যান্য তেলের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যকর হতে পারে, কারণ এগুলি হৃদরোগ এবং রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এখানে কিছু ভালো তেলের পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. অলিভ অয়েল: এটি মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

২. ক্যানোলা অয়েল: এতে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং বেশি মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৩. আবকাডো অয়েল: এটি উচ্চ মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৪. গ্রেপসিড অয়েল: এতে উচ্চ মানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

৫. নারিকেল তেল: কিছু গবেষণা দেখিয়েছে যে নারিকেল তেল ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে, যদিও এটি স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উচ্চ পরিমাণে থাকে, তাই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

৬. আলমন্ড তেল: এটি মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ভিটামিন ইতে সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

বঞ্চনীয় তেলসমূহ:

  • রেপসিড তেল: এতে উচ্চ পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকতে পারে, যা পরিহার করা উচিত।
  • সয়াবিন তেল: প্রক্রিয়াজাত এবং ট্রান্স ফ্যাটের উপস্থিতি কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর নয়।
  • ডালডা বা মার্জারিন: এদের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট থাকতে পারে, যা স্বাস্থ্যকর নয়।

আপনার খাদ্যতালিকায় তেলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা, সঠিক পরিমাণে তেল ব্যবহার করা, এবং খাদ্য সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যকর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তেলের পরিবর্তে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন বাদাম এবং বীজ ব্যবহার করাও ভালো হতে পারে।

সঠিক তেল নির্বাচন এবং খাদ্য পরিকল্পনা নিয়ে আরও বিস্তারিত পরামর্শের জন্য পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

 

Next Post Previous Post